সর্বোত্তম ফলন দিতে সক্ষম ধানের জাত শনাক্ত

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: ধান বিজ্ঞানীরা নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি কৃষকের মাঠে সর্বোত্তম ফলন দিতে সক্ষম এমন অনেকগুলো ধানের জাত শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন জাতের ফলনের তুলনা ও নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমন এবং বোরো উভয় মৌসুমেই সেরা ফলন দেওয়া ধানের জাত শনাক্ত করেছেন তারা। এ জাতগুলো সারা দেশে সম্প্রসারণ করা গেলে চাষীদের উৎপাদন এবং মুনাফা উভয়ই বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন ধান বিজ্ঞানীরা।

২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন চাল উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। হেড টু হেড অন-ফার্ম অ্যাডাপটিভ ট্রায়ালে গবেষকরা দেখেছেন, বর্তমানে ব্রি ধান৮৮, ব্রি ধান৯৬ এবং ব্রি ধান৯২ বোরো মৌসুমের সেরা ফলন প্রদানকারী ধানের জাত। রোপা আমান মৌসুমে, আইআর১৩এফ৪৪১ এবং ব্রি ধান৭৯ আকস্মিক বন্যা-প্রবণ পরিবেশের কার্যকরী জাত। এছাড়া ভারতীয় ধানের জাত স্বর্ণার বিকল্প হিসেবে দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্রি ধান৯৩, ব্রি ধান৯৪ এবং ব্রি ধান৯৫ সবচেয়ে জনপ্রিয়। তবে মাঠ পর্যায়ে আমনের সর্বোচ্চ ফলন প্রদানকারী জাত হচ্ছে ব্রি ধান৮৭।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) এবং ব্রি কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত এক কর্মশালায় গবেষণালব্ধ এসব ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

বিগত তিন বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি হেড টু হেড অ্যাডাপটিভ ট্রায়াল (এইচএইচএটি) পরিচালনা করার পর গবেষকরা এই ধানের জাতগুলো চিহ্নিত করেছেন। তারা পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও পরিমাণগত ডাটা তৈরির মাধ্যমে জনপ্রিয় পুরোনো মেগা জাতের তুলনায় নতুন উদ্ভাবিত জাতের উৎপাদনশীলতা পর্যবেক্ষণ করার জন্য ইচএইচএটি ট্রায়াল পরিচালনা করেন। এই ট্রায়ালে নতুন-উদ্ভাবিত উফশি জাত, আগে চাষ করা বেঞ্চমার্ক জাত এবং কৃষক-পর্যায়ের স্থানীয় জাতগুলোর উৎপাদনশীলতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য এক মাঠে একসঙ্গে চাষ করে উল্লেখিত ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়া গবেষণাটির মাধ্যমে বিভিন্ন সম্ভাবনাময় জাত এবং জাতগুলোর বিভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ট্রায়ালে গবেষকরা কৃষক এবং কৃষি সম্প্রসারণকর্মীদের কাছ থেকে এসব জাত সম্পর্কে মতামত সংগ্রহ করেন। এছাড়া এই ট্রায়াল কৃষকের মধ্যে কৌতূহল, জ্ঞান এবং নতুন জাতের কার্যকরী চাহিদা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, গত বোরো মৌসুমে উফশি জাতের মধ্যে সর্বনিম্ন ফলন দিয়েছে ব্রি ধান২৮ এবং জাতটিতে বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের প্রকোপও ছিল বেশি। তাই এই জাতটিকে অবিলম্বে প্রতিস্থাপন করা উচিত বলে মনে করেন ধান বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণ কর্মীরা। এছাড়া ব্রি ধান২৯ এবং ব্রি ধান৮৯-এর ফলন প্রায় সমান হয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় ব্রি ধান২৯ নেক ব্লাস্ট রোগ দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিল।

গবেষণাটির ব্রি অংশের ফলাফল উপস্থাপন করেন ফলিত গবেষণা বিভাগের প্রধান মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হুমায়ুন কবির এবং ব্রি ও ইরি অংশের ফলাফল উপস্থাপন করেন ইরির বিজ্ঞানী এবং সাউথ এশিয়া– সিড সিস্টেম অ্যান্ড প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট লিড- ড. স্বাতী নায়েক।

ড. স্বাতী নায়েক বলেন, এ ধরনের অন-ফার্ম ট্রায়াল আমাদের পুরোনো জাতগুলোর তুলনায় নতুন জাত কতটা বেশি ফলনশীল সে বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। নতুন উদ্ভাবিত ও অবমুক্তকৃত ধানের জাতগুলো যেসব অঞ্চলে চাষ করা হবে, সেসব অঞ্চলের পরিবেশগত দিক বিবেচনা করে উদ্ভাবন করা হচ্ছে। আমাদের গবেষণার মাধ্যমে নতুন জাতগুলো যথেষ্ট উন্নত কি না অথবা কৃষক ও দেশের আর্থসামাজিক উন্নতির জন্য জাতগুলোর আরও উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে কি না সেসব বিষয় সম্পর্কেও জানা গেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। তিনি বলেন, দেশে ধানের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য যে পরিবেশের যে উফশি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে সেটি সেই অঞ্চলেই চাষাবাদ করা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে সম্প্রসারণ কর্মীদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় এ জাতগুলোকে কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করা, যাতে তাদের সার্বিক উৎপাদন ও মুনাফা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের জীবনের মান উন্নয়নে সহায়তা করবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্রির পরিচালক গবেষণা ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আবু বকর ছিদ্দিক এবং ইরি-এর প্রজেক্ট লিড ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এছাড়া অনুষ্ঠানে ইরি, ব্রি, বিএডিসি, বিনা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, আরডিএ এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।